ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান কি?

ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান চিকিৎসা বিজ্ঞান, সূর্য ঘড়ি, পাটিগণিত, বীজগণিত, আস্তারলব, ডায়াগোনাল স্কেল, কাগজ শিল্প, বস্ত্র শিল্প। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন নির্দেশনা এবং ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ প্রভৃতি মুসলমানদেরকে ভূগোল শাস্ত্র অধ্যয়নে উদ্বুদ্ধ করেছে।

Jan 3, 2023 - 21:12
Jan 4, 2023 - 22:11
 0  16
ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান কি?

ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

চিকিৎসা বিজ্ঞান, সূর্য ঘড়ি, পাটিগণিত, বীজগণিত, আস্তারলব, ডায়াগোনাল স্কেল, কাগজ শিল্প, বস্ত্র শিল্প। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন নির্দেশনা এবং ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ প্রভৃতি মুসলমানদেরকে ভূগোল শাস্ত্র অধ্যয়নে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাছাড়া পবিত্র হজ্জ পালন, নামাযের জন্য কিবলা নির্ধারণ, পৃথিবীর জল-স্থল, পাহাড়-পর্বত, মৃত্তিকা, অরণ্য, জলবায়ু, দেশ-দেশান্তরের মানুষ, সমুদ্রের জোয়ার ভাটা, ঋতু পরিবর্তন, দিন-রাত্রির আবর্তন এবং চন্দ্র-সূর্যের কক্ষপথ সম্পর্কে যে আল-কুরআনে কৌতূহল উদ্দীপক অসাধারণ বৈজ্ঞানিক বিবরণ রয়েছে তা জানার জন্যই মুসলমানগণ ভূ-বিদ্যার দিকে গভীরভাবে দৃষ্টিনিক্ষেপ করেছেন।

মহানবি (স.) এর বাণী তাঁদেরকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। আব্বাসী খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও বাগদাদে মুসলিম জাহানের রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুসলমানরা ভূ-বিদ্যার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়েছে। 

আব্বাসী শাসনামলে মুসলমানগণ এশিয়া, ইউরোপ, স্পেন ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ বিজয়ের পর সেখানে গমন সহজতা ও ইসলামের আদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপক গবেষণা করেন। গ্রিক ভূগোলবিদদের তথ্য উপাত্ত দ্বারা মুসলমাগণ আরো এ বিদ্যাকে সমৃদ্ধ করেন। তাঁরা গ্রিকদের বহু ভূগোল গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করেন।

মূসা আল খাওয়ারিজমী(মৃত্যু- ৮৪৭ খৃ:) এবং সাবিত বিন কুরা (মৃত্যু-৯০১ খৃ:) কয়েকজন বিখ্যাত ভূগোলবিদ ও তাঁদের অবদান আল-খাওয়ারিজমী তিনি নবম শতকের শ্রেষ্ঠ ভূ-বিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর রচনার দ্বারা আরবিতে ভূ-বিজ্ঞানের ভিত স্থাপিত হয়।

সুরাতুল আরদ” নামক গ্রন্থটি আজও তাঁকে অমর করে রেখেছে। খলিফা আল মামুনের আমলে যে সকল মনীষী পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র অংকন করেন তাঁদের মধ্যে আল-খাওয়ারিজমী অন্যতম। খাওয়ারেজমীর নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল ফোরাত নদীর উপরে পামিরের নিকটবর্তী সিনজিরার পরিমাপ কার্য চালান। তিনি পৃথিবীর পরিধি ২০ হাজার ৪০০ মাইল এবং ব্যাস ৬৫০০ মাইল বলে মতামত দেন ।

 ইয়াকুব বিন ইসহাক আল কিন্দি: জ্যোতির্বিদ্যা ও দর্শন চর্চার পাশাপাশি ভূগোল চর্চায় ও খ্যাতি অর্জন করেন। ভূগোল বিষয়ে তাঁর দুটি মৌলিক গবেষণা রয়েছে। তা হলো- 'রাসমুল মামুর মিনাল আরদ' এবং “রিসালাতুল বিহার ওয়াল মাল ওয়াল জাযর” ।

ইবনে খুরদাদবিহ

সর্ব প্রথম ভূগোল বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁকে আরবি ভূ-গোলবিদদের জনক বলা হয়। তাঁর 'কিতাবুল মামালিক ওয়াল মামালিক' একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ। এতে প্রধান প্রধান বাণিজ্য পথ এবং জাপান, চীন, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের বর্ণনা রয়েছে। ইবনে ওয়াদী আল ইয়াকুবী (মৃ: ২৭৮ হি) ভূগোল বিদ্যায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর গ্রন্থ “কিতাবুল বুলদান” এ অনেক ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক আলোচনা রয়েছে।

মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল মুকাদ্দেসী (মৃত্যু ৩৭৫ হি:) সর্বশ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ ছিলেন। সুদীর্ঘ ২০ বৎসর ভ্রমণ করে তিনি পৃথিবীর বহু নির্ভুল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। মুসলিম জাহানকে তিনি ১৪টি ভাগে বিভক্ত করে প্রত্যেক বিভাগের পৃথক মানচিত্র তৈরি করেন । তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল-“আহসানুত তাকাসীম ফী সারিফাতিল আকালিম”।

ইয়াকুত আল হামাভী (১১৭৯ খৃ:) গ্রিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১২২৮ সালে “মাজমাউল বুলদান” নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এই পুস্তকে তিনি বিভিন্ন জাতির বিবরণ এবং বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের তথ্য বর্ণের ক্রমানুসারে সজ্জিত করেন। এটি একটি বিশ্বকোষ হিসাবে মর্যাদা প্রাপ্ত ।

আল-বিরুনী (৯৭৩-১০৪৮) ছিলেন বিশ্বের প্রথিত ভূগোলবিদদের অন্যতম। তাঁর রচিত অমর গ্রন্থ “কিতাবুল হিন্দ”। তিনিই সর্ব প্রথম পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্র তৈরি করেন। “কিতাবুত তাফহীম” গ্রন্থে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত ভাবে আলোকপাত করেন।

আল ইদ্রিসী (জন্ম-১০৯৯) মুসলিম বিশ্বের অনন্য প্রতিভার অধিকারী ভূগোলবিদ। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম “কিতাবুল রোজারী” । তিনি একটি খ-গোলক (Galestial sphere) তৈরি করেছিলেন এবং একটি গোলকে পৃথিবীর অবস্থান নির্দেশ করেছিলেন। তিনি প্রায় ৭০টি মানচিত্র রচনা করেছিলেন এবং এতে পৃথিবীর অক্ষাংশ পরম্পরায় ৭টি আবহাওয়া বিভাগ চিহ্নিত করেছিলেন।

মুসলিম ভূগোলবিদদের মধ্যে আরো যারা খ্যাতি লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে আল মাসউদী, ফাজারী, ফারাগানী, আবু ইসহাক ফারিসী, আল হারাবী, তকী উদ্দিন আল বদরী, আবু হামিদ আল কাদাসী এবং শামসুদ্দিন সূয়ুতী অন্যতম । জ্যোতির্বিদ্যায় মুসলমানদের অবদান। জ্যোতির্বিজ্ঞান মহাকাশ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞান। এটি এমন এক বিজ্ঞান যাতে আকাশ মণ্ডলের গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিস্কের শ্রেণি বিভাগ, গতিবিধি এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে।

জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র এক নয়। জ্যোতিষশাস্ত্র হলো ভবিষ্যত গণনামূলক শাস্ত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানে আলোচিত হয় গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য ও অতিলৌকিক বস্তুসমূহের গতিবিধি। আর জ্যোতিষ শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়, মানুষ ও সাম্রাজ্যের উপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব সম্পর্কে।

জ্যোতিষ শাস্ত্র ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও বহু মুসলিম বিজ্ঞানী জ্যোর্তিবিজ্ঞানের পাশাপাশি জ্যোতিষ শাস্ত্রও চর্চা করেছেন। তবে, তাঁরা রাশি নির্ণয় ও ব্যক্তি সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করা থেকে বিরত থাকতেন। যাঁরা ভবিষ্যত গণনার বিরোধিতা করতেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন-  ইবনে রুশদ, আল গাযালি, আল বিরুনী এবং নাসির উদ্দিন তুসি। মুসলমান বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর আকার, অক্ষাংশের বিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য নিরূপণ করেন। গ্রহের তির্যক গতি সম্পর্কে আল মাইমুন এবং বায়ু মণ্ডল সংক্রান্ত প্রতিফলন তথ্য আবুল হাসান আবিস্কার করেন।

মুসলমানরাই সর্ব প্রথম ইউরোপে মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম বিজ্ঞানীরাই প্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্র, দিক নির্ণয় যন্ত্রসহ দোলক ও অন্যান্য যন্ত্র আবিস্কার করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের কয়েকজন মুসলিম মনীষী,  মুহাম্মদ ইবরাহীম আল ফাজারী আব্বাসী খলিফা আল মনসুরের দরবারের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা ও অনেক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আবিস্কার করেন।  আল নিহাওয়ান্দি প্রথম যুগের একজন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তিনি গবেষণা করে যে “মুসতামাল” নামক নির্ঘন্ট প্রণয়ন করেছিলেন যা গ্রিক ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে সমাদৃত হয়েছিল।

আল খাওয়ারেজমী- ইসলামের ইতিহাসের এক অনন্য সাধারণ বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ আল খাওয়ারিজমী(৭৮০- ৮৫০খ্রি:) জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেন। তাঁর প্রস্তুতকৃত নির্ঘন্ট পরবর্তীতে সম্পাদিত হয় এবং এডোলার্ড কর্তৃক ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে তিনি “কিতাবুল আমল বিল এ্যাস্ট্রোলেব” নামক দুইটি বই সহ অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন।

#আল ফারাগানী আল মামুনের শাসনামলের অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি পৃথিবীর ব্যাস নতুন করে পরিমাপ করেছিলেন এবং গ্রহসমূহের আপেক্ষিক দূরত্ব নির্ধারণ করেছিলেন।

# আবু মাশার আল বালখী একজন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তাঁর চারটি গ্রন্থ ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়।

#আল বাত্তানী ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী। জ্যোতির্বিদ্যার উপর তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল “কিতাবুল জিজ”।

#আবু রায়হান আল বেরুনি (জন্ম-৯৭৩ খৃ:) বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। বিজ্ঞানে তাঁর সুবিশাল গ্রন্থ হচ্ছে “কানুনে মাসউদী” । তিনি ত্রিকোণোমিতিকে উচ্চ স্তরে উন্নীত করেন।

#অন্যান্য বিজ্ঞানের পাশাপাশি ইবনে সীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানেও বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি সংখ্যা গণনার জন্য যন্ত্রপাতির উদ্ভবের দিকে বেশি নযর দেন। ফলে, সূক্ষ্ম গণনার উপযোগী Vernier এর মতো একটি যন্ত্র আবিস্কার করেন।

দশম শতাব্দির শেষের দিকে বহু জ্যোতির্বিজ্ঞানী বাগদাদে বসবাস করতেন। এঁদের আবিষ্কার, গবেষণা গ্রন্থ ও সূত্রের মাধ্যমে আধুনিক ইউরোপ ও বিশ্ববাসী আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করে।

সারসংক্ষেপ

আমরা জানি যে আল-কুরআন একটি বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। আল-কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন নির্দেশনা, ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ, নামাযের জন্য কিবলা নির্ধারণ, জোয়ার-ভাটা, ঋতু পরিবর্তন, দিন-রাত্রির আবর্তন এবং চন্দ্র-সূর্যের কক্ষ পথ সম্পর্কে আল কুরআনে বর্ণিত অসাধারণ বৈজ্ঞানিক বিবরণ মুসলমান ভূগোলবিদদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। |

মহানবি (স.) এর বাণী মুসলমানদেরকে ভূগোল চর্চায় আরো বেশি উৎসাহিত করেছে। আল-বেরুনী সর্ব প্রথম পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্র রচনা করেন। আল-ইদ্রিসী পৃথিবীর ৭০টি মানচিত্র রচনা করেন। আল-কুরআনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনুপ্রেরণায় বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমানগণ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। মুসলমান বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর আকার ও অক্ষাংশের বিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য নিরূপণ করেন।

আরো কিছু তথ্য দিচ্ছি বিভিন্ন পত্রিকা ও ওয়েবসাইট থেকে আপনারা এগুলো নিয়ে দেখতে পারেন।

বাংলাদের একটি জাতীয় পত্রিকা কালের কন্ঠ দেখুন

উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া 

বঙ্গ টু্ইট

https://www.wikiwand.com/en/Ibn_Khordadbeh

https://en.wikipedia.org/wiki/Ibn_Khordadbehhttps://en.wikipedia.org/wiki/Ibn_Khordadbeh

https://thebanglareader.com/wall/the-unique-contribution-of-muslims-to-world-civilization-part-1

https://www.odhikar.news/religion-and-life/13267

https://nobojagaran.com/unforgettable-and-historical-contribution-of-muslim-scientists-in-mathematics/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow