সংস্কৃতির পরিচয়
সংস্কৃতি শব্দটি সাধারণত সাকাফাহ, তাহযিব তামাদ্দুন বা কালচারের প্রতিশব্দ। আরবিতে যাকে বলা হয় সাকাফাহ্ সংস্কৃতি শব্দটি সংস্করণ বা সংস্কার বিশেষ্য পদ থেকে গঠিত। সংস্করণ অর্থ বিশোধন, সংশোধন। আর সংস্কার অর্থ শুদ্ধিকরণ, শাস্ত্রীয় নীতিমালা ও অনুষ্ঠানাদি দ্বারা পবিত্রকরণ বা শোধন করণ, পরিষ্কার বা নির্মল করণ, উৎকর্ষ সাধন, উন্নতি বিধান ও মেরামতকরণ।

সংস্কৃতির পরিচয়
সংস্কৃতি শব্দটি সাধারণত সাকাফাহ, তাহযিব তামাদ্দুন বা কালচারের প্রতিশব্দ। আরবিতে যাকে বলা হয় সাকাফাহ্ (433)সংস্কৃতি শব্দটি সংস্করণ বা সংস্কার বিশেষ্য পদ থেকে গঠিত। সংস্করণ অর্থ বিশোধন, সংশোধন। আর সংস্কার অর্থ শুদ্ধিকরণ, শাস্ত্রীয় নীতিমালা ও অনুষ্ঠানাদি দ্বারা পবিত্রকরণ বা শোধন করণ, পরিষ্কার বা নির্মল করণ, উৎকর্ষ সাধন, উন্নতি বিধান ও মেরামতকরণ।
অতএব, সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের উপযুক্ত, সুন্দর, মার্জিত ও পরিশীলিত আচার-আচরণ, আহার-বিহার, চলাফেরা, শোক- তাপ, আনন্দ-বেদনার অভিব্যক্তি, শিল্প, সাহিত্য, ভাষা, ধর্মীয় রীতি-নীতি, মানবিক ও আধ্যাত্মিক চিন্তা-ভাবনা এবং মানুষের দিন রাত্রির হাজারো কাজ-কর্ম এ সব কিছুরই সমষ্টি ।
ইসলামি সংস্কৃতি পরিচয়
ইসলামি জীবন দর্শনের আলোকে মানুষের ব্যবহারিক জীবন ও পরিবেশে যে সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে তাই ইসলামি সংস্কৃতি। ইসলামি সংস্কৃতিতে ইসলামি মূল্যবোধ, আকীদা-বিশ্বাস ও আচরণিক কার্যাদি সবই ইসলামি শরিয়াতের অনুকূল থাকে। শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য শিল্প ইত্যাদি ইসলামি ভাবধারায় গড়ে উঠে। এক কথায়, জীবনের বিভিন্ন স্তরে ইসলামি মৌল বিশ্বাসের ভিত্তিতে যত নিয়মাবলী, বিধি-বিধান পালনীয় এর সব কিছুই ইসলামি সংস্কৃতির অঙ্গ।
ইসলামি জীবন বোধের বিপরীতে কোন আচার-আচরণ ও কৃষ্টি কোন মুসলমান গ্রহণ করলে তা ইসলামি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়না। বরং বিজাতীয় অনুকরণ, কুসংস্কার, বিদআত ও ক্ষেত্র বিশেষে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত হয়। ইসলামি সংস্কৃতিতে বিজাতীয় অনুকরণ নিষিদ্ধ। মহানবি (স.) বলেন- “যে ব্যক্তি অপর জাতির অনুসরণ করবে সে সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে”। (মুসনাদে আহমদ)
ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্ব
ইসলামি শরিয়াতের মূল দাবি অনুযায়ী একজন মানুষ চিন্তা ও কর্মের সংস্কার ও পরিশুদ্ধি ছাড়া প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। তাই, একজন মানুষকে ইসলামি সংস্কৃতিতে সংস্কৃতিবান হতে হলে প্রথমে মুসলমান হতে হবে অর্থাৎ ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারি হতে হবে। ইসলামি সংস্কৃতি ইমানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এটি ইমানের রক্ষাকবচ। মুসলিম জাতির পরিচিতি কেবল ইসলামি সংস্কৃতির মাধ্যমেই তুলে ধরা সম্ভব। সমাজে যদি ইসলামি সংস্কৃতির চর্চা না থাকে তাহলে বিজাতীয় সংস্কৃতি সেখানে বাসা বাঁধে। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে জাতীয় সত্তা, পরিচিতি বা জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য ইসলামি সংস্কৃতির চর্চা আবশ্যক।
ইসলামি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য
ইসলাম যেমন কালজয়ী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, তেমনি ইসলামি সংস্কৃতিও কালজয়ী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ সংস্কৃতি মানব রচিত কোন কিছু থেকে উৎসারিত নয়। এ সংস্কৃতির উৎস হলো আল-কুরআন ও সুন্নাহ। সকল মানুষের জন্য এ সংস্কৃতি অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা মানব জাতির জন্য যে জীবন পদ্ধতি দান করেছেন তাই এই সংস্কৃতির মূল উৎস। আল্লাহ তাআলা বলেন- “নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।” (সূরা আলে ইমরান ৩: ১৯)
ইসলামি সংস্কৃতি বিশ্বজনীন । এটা কোন দেশ, কাল বা স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন মুসলমান যে কোন দেশের, যে কোন সমাজের বা যে কোন কালের হোক না কেন ইসলামি সংস্কৃতি তাকে সুন্দর ও শালীন জীবন দান করে। ইসলামি সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- মানুষে মানুষে কোন প্রভেদ না করা। উচু-নিচু, সাদা-কালো, আরব-অনারব এর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। সকলেই আদম সন্তান আর আদম মাটির তৈরি। হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন-
সকল মানুষ আদম (আ:) থেকে উৎসারিত আর আদম (আঃ) মাটি থেকে তৈরি”। (তিরমিযি, মুসনাদে আহমদ) ইসলামি সংস্কৃতি সাম্যের ধারক ও বাহক। সকল মানুষ ইসলামের দৃষ্টিতে সমান। বর্ণবাদ, শ্রেণিবাদ ও আভিজাত্যবাদের কোন স্থান ইসলামে নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন- তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাসম্পন্ন যে, তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি”। (সূরা আল- হুজুরাত-৩৯:১৩)।
ইসলামি সংস্কৃতি ইমান ও আমলের সমন্বয়ে গঠিত। একজন মুসলমান যা বিশ্বাস করে তা আমলে পরিণত করা তার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। ইসলামে ইমান ব্যতীত আমলের যেমন কোন মূল্য নেই, তেমনি আমল ব্যতীত ইমানের কোন মূল্য নেই। একজন মানুষকে ইসলামি সংস্কৃতিবান তখনই বলা হবে, যখন ইমান ও আমলের সমন্বয়ে তার জীবন পরিচালিত হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “যারা ইমান আনে ও সৎ কর্ম করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস”। (সূরা কাহাফ-১৮:১০৭) ইসলামি সংস্কৃতিতে ইহকালীন জীবন ও পরকালীন জীবন একই সূত্রে গাথা। তাই ধর্ম ও সমাজ বা রাষ্ট্রকে আলাদা করে দেখানো যায় না।
ইসলামি সংস্কৃতিতে বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, ধোকাবাজি করা, অশ্লীলতা ও উলঙ্গপনার কোন স্থান নাই। মার্জিত রুচিশীল ও পরিশীলিত জীবনাচার হল ইসলামি সংস্কৃতি।
সারসংক্ষেপ
ইসলামি সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের উপযুক্ত, সুন্দর ও মার্জিত ও পরিশীলিত আচার-আচরণ, আহার-বিহার, চলাফেরা, শোক- তাপ, আনন্দ-বেদনার অভিব্যক্তি। মানুষের শিল্প-সাহিত্য, ভাষা, ধর্মীয় রীতি-নীতি, মানবিক ও আধ্যাত্মিক চিন্তা-ভাবনা। ইসলামি মূল্যবোধ, আকিদা-বিশ্বাস, আচরণিক কার্যাদি ইত্যাদি ইসলামি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য শিল্প ইত্যাদি ইসলামি ভাবধারায় গড়ে উঠে। ইসলামি সংস্কৃতিতে বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও উলঙ্গপনার কোন স্থান নাই। মার্জিত, রুচিশীল ও পরিশীলিত জীবনাচার ইসলামি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশের কলা বিজ্ঞানীদের নিয়ে কিছু কথা বল্লেন: ড. সলিমুল্লাহ খান যে ব্যাখ্যা দিলেন।মঙ্গল ও অমঙ্গলের শক্তি
What's Your Reaction?






